কৃষ্ণকলি, নির্ভয়া, আসিফা, বানো, অভয়ারা…
কৃষ্ণকলি, নির্ভয়া, আসিফা, বানো, অভয়ারা…
কৃষ্ণকলি, নির্ভয়া, আসিফা, বানো, অভয়ারা…
এই ছবিতে ছটি প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে। নাৎসি বাহিনী এবং হিঁদুদের স্বস্তিকচিহ্ন (একটা ঘড়ির কাঁটার দিক ধরে, আরেকটা ঘড়ির উলটো মার্গে), সিন্ধু সভ্যতার শিলায় সম্ভবত বৈদিক যুগের শাকম্ভরী (জমি=নারী), রক্তাক্ত বসুধারা (যা কিনা উর্বরা জমির নারী-উপস্থাপন এবং সঙ্গমের এক বিশেষ ভঙ্গিমা), বিশ্ব বাংলার “ব” এবং যানবাহন চলাচলের পথনির্দেশক চিহ্ন (Give Way থেকে কোনো নিঠুর কাকতালে সেটা হয়ে গেছে Give Away) । এগুলোর জালের মতো আন্তঃসম্পর্ক পাঠক নিজেই খুঁজে বের করবেন।
Posted on 14th September, 2024 (GMT 15:50 hrs)
Updated on 16th September, 2024 (GMT06:37 hrs)
ABSTRACT
The article reflects on the b r u t a l realities of gender-based v i o l e n c e and i-n-j-u-st-i-c-e, weaving together cultural, political, and artistic references. Through parodied and modified renditions of Rabindranath Tagore’s songs, the author critiques society’s handling of s e x u a l v i o l e n c e, specifically referencing cases like the h o r r I f I c c r i m e s against Nirbhaya, Asifa, Bilkis Bano, Tilottama/Abhaya and so on…..The piece calls for non-violent civil disobedience movement against theocratic syndicate-dependent crony and monopoly capitalism and possible transformation(s), using powerful metaphors (displacement), metonyms (condensation) and imageries to convey the pain, rage, and resistance of victims and survivors.
___________________________________________________________________
অভয়ার নৃশংস ধর্ষণ আর খুনের পর জমায়েতে গেছি। যে যার মতো করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। হঠাৎ এক ন্যালাখ্যাপা মানুষ গিটার নিয়ে উঠে বললেন,
“আমি সাহস কইর্যা রোবিবাবুর গানের একটা প্যারোডি বানাইসি। এই গানখানের ভেন রকমের রূপান্তর কইরাসেন সলিল চৌধুরি মহাই আর হেমাঙ্গ বিশ্বেস মহাই। আমি তেনাদের নোখের যুগ্গি নই। তবু তেনাদের পেন্নাম ঠুকে থুড়ি বাঁ হাতের মুঠি তুইল্যা লালনসালাম কইর্যা, চুমা খাইয়া চাষা আর বুনো রোবি ঠাকুরের কেত্তন গানখান উল্টোপালটা কইর্যা গাইসি। ছন্দপতন ঘটিলে ক্ষমাঘেন্না কইর্যা ধইর্যা দিবেন আর politically incorrect মনে হইলে আমারে আচ্ছা কইর্যা আড়ং ধোলাই দিবেন।
আরো জানাইয়া রাখি, এক স্বঘোষিত চোটিচাটা পোতিভাবান বঙ্গবান নাগরিক কবিয়ালের মতোই গানের মাঝখানে আলবাল কই। দরকার বুঝলে জমায়েত হইতে ঘাড়ধাক্কা দিয়া বার কইর্যা দিবেন।”
এই বলে তিনি গিটারে রবি ঠাকুরের কেত্তনগানকে “বিকৃত”(?) করে গাইতে গাইতে মাঝেমধ্যেই বকবক করতে লাগলেন।
“তিলোত্তমা আমি তারেই বলি, ধর্ষিতা তারে বলে অন্য লোক।
এই শহরে দেখেছিলেম মর্গে তিলে তিলে মরা মেয়ের কাঁচের টুকরো ভরা চোখ।
শরীরে কাপড় ছিল না তার মোটে, ছেঁড়া চুল মেঝের ‘পরে লোটে।
ধর্ষিতা? তা সে যতই ধর্ষিতা হোক, দেখেছি তার আগুনভরা চোখ।
কমরেড, রক্তচেরা চোখও কইতে পারেন। এই পংক্তির রূপান্তরে কমরেড থুড়ি রেনিগেড সলিলদা গাইয়াসেনঃ
…তার দুটি কালো হরিণ চোখে চোখে,
শুধু বেদনার দহন ঝলকে
বাঁকা দুটি ভুরু ধনুর টঙ্কারে
আমি যে দেখেছি মরণ শঙ্কারে
ঘিরেছে নিঃসহায়ে।
আর কমরেড থুড়ি রেনিগেড হেমাঙ্গদা গাইয়াসিলেনঃ
কৃষ্ণকলি নয় সে খর্ব,
পাষাণী অহল্যা অগ্নিগর্ভ
ভুখ মিছিলে সম্মুখে
তার ধ্বনি শুনতে পাই।”
এই রূপান্তর দুটো গেয়েই আশ্চর্য উল্লম্ফনে তিনি তাঁর গানে ফিরলেন–
“ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে, নগরে তার হলো না কোনো ঠাঁই
তিলোত্তমা ব্যস্ত ব্যাকুল পদে হাসপাতালে ত্রস্ত হল তাই।
ছাদের পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মদ্দার গুরুগুরু।
ধর্ষিতা? তা সে যতই ধর্ষিতা হোক, দেখেছি তার রক্তমাখা চোখ।
মদ্দারা সব এল হঠাৎ ধেয়ে, যোনির ক্ষেতে বইলো রক্ত-ঢেউ।
আর জি করে দাঁড়িয়েছিলেম একা, ঘরের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলো না সে চেয়ে আমি জানি না জানে সেই মেয়ে।
ভালো? তা সে যতই ভালো হোক, দেখেছি তার রক্তভরা চোখ।
এমনি করে ভালো কাজল মেয়ে মরা মাসিকে আসে যোনির কোণে।
এমনি করে কালো নিঠুর ছায়া মলমাসে নামে জানোয়ারের বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে [৯ই আগস্ট ভরা শ্রাবণরাত্তির] হঠাৎ ভয় ঘনিয়ে আসে চিতে।
ভালো? তা সে যতই ভালো হোক, দেখেছি তার রক্তভেজা আগুনভরা চোখ।
তিলোত্তমারা, অভয়া-নির্ভয়ারা রক্তচেরা লালিম চোখগুলা আজ বিদ্রোহের ইঙ্গিত দিতাসে। কমরেড, ভাইব্যা দেখুন আপনারা, ব-এর ত্রিকোণাকৃতি Δ আদতে হিঁদুদের আস্তানায় যোনি-চিহ্ন–এই–এই ভুবনডাঙার বিশ্ববাংলায় লাঞ্চিত ব-এর ত্রিভুজকে আজ উল্টাইয়া দিতা হবেই হবে। তা’বইল্যা হিটলারি স্বস্তিকেও আমাগো স্বস্তি নাই। এদের সব
মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদেয় কর
যতো আছে নোংরা সবই ঠ্যাংড়া মেরে
ঘর থেকে দূর কর
ঘরের ফিরিয়ে দে না হাল।
ছিঁ ছিঁ এত্তা জঞ্জাল, ছিঁ ছিঁ এত্তা জঞ্জাল।”
ফের তিনি লাফ দিলেনঃ
“ভালো? তা সে যতই ভালো হোক, গুণ্ডারা তার রক্তে ভাসায় চোখ।
দেখেছিলেম ভুবনডাঙার মাঠে ভালো মেয়ের ভয়মাখা সেই চোখ।
ওরা দেহের থেকে তুলে নিল বাস, লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ।
ভালো? তা সে যতই ভালো হোক, দেখেছি তার রক্তজ্বলা চোখ।”
এবার তিনি ঝটিতি ভিন্ন এক গান ধরলেন, যে গানে রবি ঠাকুরও আছেন, আবার চ্যাপলিনও আছেন–
“বিরস দিন কিন্তু কামকাজ
(বিরল নয়গো ঠাকুর, কেননা…)
এসেছে প্রেম প্রবল বিদ্রোহে, বিদ্রোহে, বিদ্রোহে,
প্রেম, প্রেম, প্রেম… love, love, love…”
প্রেমের বাঁশি এবার স্থানান্তরিত হবে বিদ্রোহের বিউগলে…
পুং উনি তখন গিটারের ধাঁচাটার ওপর কোমল তাঁর অঙ্গুলিগুলি পেলব কোমলে হাত বোলাতে বোলাতে আদর করছেন। গিটার-শরীর নারী-শরীর হয়ে ওঠে, ভিন্ন এক নিঃসঙ্গ আদুরে রতি- সমশৃঙ্গারে!
রাষ্ট্রের সাঁজোয়া বাহিনী ছুটে আসে কামানবন্দুক আর কান্নার গ্যাস নিয়ে, কেননা এমনিতে কান্না পায় না আমাদের—তবুও কাঁদুনে গ্যাস আর বুলেট ছড়িয়ে দিলো ফুল।
কবীরের মৃতদেহ হিঁদু-মোছলমানের ব্যর্থ নফরতের কাজিয়ায় ফুলশেয করে রচনা।
###
রবি ঠাকুরের গানের উপস্থাপন সুচিত্রা মিত্রের গলায়ঃ
https://youtu.be/FJcMIxbnAjA?si=25ePeWlps-aR7rgr
রবি ঠাকুরের গানের পুনঃ-উপস্থাপন, সলিল চৌধুরীর সৃজনে এবং আবারো সুচিত্রা মিত্রের কন্ঠেঃ
রবি ঠাকুরের গানের ভিন্ন পুনঃ-উপস্থাপন, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সৌজন্যে— প্রথমে শুভেন্দু মাইতি এবং পরে দোহারের নিবেদনেঃ
https://youtu.be/7t3h_5wdrYM?si=WsGoG8_f6ptbT2Mv
https://youtu.be/EdPOQ4Bzitg?si=lX7tDzcKb3iEaV6o
শ্রদ্ধেয় প্রতুলদা,
আপনার এই গানটা দেবার সময় আমরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছিলুম। আমরা মেনে নিতে পারিনি আপনার আগাছা ঘাসের শিবিরে মিশে যাওয়াকে। তবুও, অথরের অথরিটির যখন এন্তেকাল ঘটে, তখন পাঠক হয়ে ওঠে স্বয়ম্ভূ, সার্বভৌম। তখন এই গান আপনার নয়, আমার গান হয়ে ওঠে। এখানেই পাঠকের স্ব-অধীনতা।
https://youtu.be/_F1fUsm06Ko?si=pW-Fiqwb49pMFOQu
যিনি বারাণসীর “মণিকর্ণিকায় মরলে স্বর্গবাস হবে”, এই আপ্তবাক্যকে অস্বীকার করে পাড়ি দিয়েছিলেন মাঘার নামক ভিন্ন এক স্থানে, তাঁর রচিত একটি দোঁহা এখানে দেওয়া হলো। কবীর এখন নয়াউদারবাদের “মুক্ত” বাজারে (একেই বলে নরখাদক, বন্য পুঁজিবাদের অভ্যুত্থান) দাঁড়িয়ে শত্রু-মিত্রহীন এক ঠাঁইতে ভেঙে ফেলবেন খ্যামতার একমাত্রিক ধাঁচাকে– কবীর সেখানে sa(va)ge হয়ে ওঠেন!
https://www.youtube.com/watch?v=DwwbjvYbAYc&t=6s
পাঠকের প্রতিঃ
এই লেখাটি ফেসবুক “কম্যুনিটি স্ট্যানডার্ড বিরোধী” দাগিয়ে দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে তিন-তিনবার। অগত্যা, হে পাঠক, আপনাদের কাছে আমাদের তো পৌঁছতেই হবে আপনাদের…
সহায়তাঃ আখর বন্দ্যোপাধ্যায় ⤡
Comments
Post a Comment